বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

জীবের বৃদ্ধি ও বংশগতি অধ্যায়ের ক্লাস লেকচার-পর্ব:০১

কোষ বিভাজন

কোষ বিভাজন

কোষ

সংজ্ঞা: জীবদেহের গাঠনিক ও কার্যকরী একক যা অন্য কোনো সজীব মাধ্যম ব্যাতিরেখেই নিজের প্রতিরূপ তৈরী করতে পারে তাকে কোষ বলে।

কোষ বিভাজন

সংজ্ঞা: একটি মাতৃকোষ হতে একাধিক অপত্য কোষ তৈরী হবার প্রক্রিয়াকে কোষ বিভাজন বলে।

কোষ বিভাজন তিন প্রকার:

  1. অ্যামাইটোসিস
  2. মাইটোসিস
  3. মিয়োসিস

অ্যামাইটোসিস

সংজ্ঞা: যে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় একটি মাতৃকোষের নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজম কোনো জটিল অন্তবর্তী পর্যায় ছাড়াই সরাসরি দুটি অপত্য কোষে পরিণত হয় তাকে অ্যামাইটোসিস কোষ বিভাজন বলে।

বৈশিষ্ট্য:

  1. কোষটি গোল আকার ধারণ করে।
  2. নিউক্লিয়াসটি লম্বা হয়ে ডাম্বেল আকার ধারণ করে এবং মাঝ বরাবর সংকুচিত হয়ে যায়।
  3. একই সাথে কোষ পর্দাটি চারিদিক থেকে ভাঁজ হয়ে ভেতরে প্রবেশ করে।
  4. নিউক্লিয়াসটি মাঝখান হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াসে পরিণত হয়।
  5. একই সাথে কোষ পর্দাটি চক্রাকারে বিপরীত প্রান্ত থেকে ভেতরের দিকে মিলিত হয়ে দুটি অপত্য কোষ উৎপন্ন করে।

এ ধরণের কোষ বিভাজন নিম্ন শ্রেণীর এক কোষী জীবের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য হয়ে থাকে।

মাইটোসিস

সংজ্ঞা: যে জটিল কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় একটি মাত কোষের নিউক্লিয়াস প্রথমে এবং সাইটোপ্লাজম পরে একবার করে বিভাজিত হয়ে দুটি অপত্য কোষের সৃষ্টি করে যেখানে প্রতিটি নতুন সৃষ্ট কোষের ক্রোমোজোম সংখ্যা, গঠন ও গুণাগুণ হুবহু মাতকোষের অনুরূপ হয় তাকে মাইটোসিস কোষবিভাজন বলে।

মাইটোসিসের বৈশিষ্ট্য:

  1. মাইটোসিসের ফলে একটি নিউক্লিয়াস থেকে দুটি নিউক্লিয়াসের সৃষ্টি হয়।
  2. এর ফলে নতুন সৃষ্ট কোষ দুটির ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃকোষের সমান হয়।
  3. অপত্য কোষদুটি সর্বতোভাবে সমগুণ সম্পন্ন হয়।
  4. মাইটোসিস কোষ বিভাজনের ফলে সৃষ্ট কোষ বৃদ্ধি পেয়ে মাতৃকোষের সমান হয়।
  5. এ কোষ বিভাজনে প্রতিটি ক্রোমোজোম সেন্ট্রোমিয়ার সহ লম্বালম্বি ভাবে বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য ক্রোমোজোম সৃষ্টি করে।

মাইটোসিসের গুরুত্ব:

  1. এর ফলে নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজমের মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকে।
  2. এর ফলে বহুকোষী জীবের দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে।
  3. অপত্য ও মাতৃ কোষের ক্রোমোজোম সংখ্যা ও গুণাগুণ একই থাকায় দেহের বৃদ্ধি সুশৃঙ্খলভাবে হতে পারে।
  4. কোষের স্বাভাবিক আকার, আকৃতি ও আয়তন বজায় রাখতে এ কোষ বিভাজন প্রয়োজন।
  5. ক্ষতস্থান পরণ ও নতুন কোষ সৃষ্টির জন্য এ কোষ বিভাজন প্রয়োজন।
  6. অঙ্গজ জননে ও জনন কোষের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য এ কোষ বিভাজন প্রয়োজন।
  7. জীবের গুণগত স্থিশীলতা বজায় রাখতে এ কোষ বিভাজন প্রয়োজন।

উন্নত উদ্ভিদ ও প্রাণির দেহকোষ এ প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হয়।

ইন্টারফেজ:

সংজ্ঞা: বিভাজন শুরুর পূর্বে কোষের যে প্রস্তুতিমূলক কাজ করতে হয় তাকে ইন্টারফেজ বলে।

মাইটোসিসের প্রধান ধাপ দুটি:

  1. ক্যারিওকাইনেসিস
  2. সাইটোকাইনেসিস

ক্যারিওকাইনেসিস:

সংজ্ঞা: মাইটোসিস কোষবিভাজনের নিউক্লিয়াসের বিভাজনকে ক্যারিওকাইনেসিস বলে।

ক্যারিওকাইনেসিস পাঁচটি ধাপে সম্পন্ন হয়। যথা:-

  1. প্রোফেজ
  2. প্রো-মেটাফেজ
  3. মেটাফেজ
  4. অ্যানাফেজ
  5. টেলোফেজ

শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

নৈর্ব্যক্তিক অনুশীলন

Life Science Objective Questions (1-20)

জীববিজ্ঞান : প্রথম অধ্যায় : জীবন পাঠ (১-১0)

১. জীববিজ্ঞানের কোন শাখায় কীটপতঙ্গ নিয়ে আলোচনা করা হয়

২. শ্রেণিবিন্যাসের উদ্দেশ্য হলো--

i. জীবের উপদল সম্পর্কে জানা

ii. জীবের এককের নামকরণ করতে পারা

iii. বিস্তারিতভাবে জ্ঞানকে উপস্থাপন করা

নিচের চিত্রটি দেখে ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও।

৩. চিত্রের জীবটির নাম কী?

Bacteria

8. উদ্দীপকের চিত্রে প্রদর্শিত জীবটির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে--

i. এরা চলনে সক্ষম

ii. এরা খাদ্য তৈরিতে অক্ষম

iii. তাদের নিউক্লিয়াস সুগঠিত

৫.Nymphea nouchali নিচের কোনটির বৈজ্ঞানিক নাম?

৬. কোন তন্ত্রটি পেশীকে চালনা করে?

7. নিচের কোনটি স্বভোজী?

৮. আরশোলার বৈজ্ঞানিক নাম কী?

৯. কাইটিন দিয়ে কার কোষ প্রাচীর গঠিত?

১০. জীববিজ্ঞানের কোন শাখায় জীবের ক্রমবিকাশ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়?

জীবকোষ ও টিস্যু অধ্যায়ের কোষীয় অঙ্গাণু অংশের ক্লাস লেকচার

কোষ ও কোষীয় অঙ্গাণু | জীববিজ্ঞান

কোষ ও কোষীয় অঙ্গাণু 🧬

কোষ 🧫

সংজ্ঞা

বৈষম্য ভেদ্য পর্দা দিয়ে আবৃত এবং জীবজ ক্রিয়া কলাপের একক যা অন্য সজীব মাধ্যম ছাড়াই নিজের প্রতিরূপ তৈরি করতে পারে তাকে কোষ বলে। নিউক্লিয়াসের গঠনের উপর ভিত্তি করে কোষ দুই প্রকার:

১. আদিকোষ বা প্রাককেন্দ্রিক কোষ

সংজ্ঞা

যে সব কোষের নিউক্লিয়াস আদি প্রকৃতির অর্থাৎ নিউক্লিয়াস সুগঠিত নয়, নিউক্লিয়ার পর্দা অনুপস্থিত, নিউক্লিওবস্তু সাইটোপ্লাজমে ছড়ানো-ছিটানো থাকে, রাইবোসোম ছাড়া অন্য কোনো কোষীয় অঙ্গাণু যেমন মাইটোকন্ড্রিয়া, গলজিবস্তু, এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম, সেন্ট্রিওল, লাইসোসোম, প্লাস্টিড ইত্যাদি থাকেনা তাদেরকে আদিকোষ বলে। যেমন: নীলাভ সবুজ শৈবাল, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি।

২. প্রকৃতকোষ বা সুকেন্দ্রিক কোষ

সংজ্ঞা

যে সব কোষের নিউক্লিয়াস সুগঠিত অর্থাৎ নিউক্লিয়ার পর্দা ও নিউক্লিওলাস উপস্থিত থাকে, ক্রোমোজোমে উঘঅ, প্রোটিন, হিস্টোন এবং অন্যান উপাদান থাকে, রাইবোসোম ছাড়াও অন্যান কোষীয় অঙ্গাণু যেমন মাইটোকন্ড্রিয়া, গলজিবস্তু, এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম, সেন্ট্রিওল, লাইসোসোম, প্লাস্টিড ইত্যাদি থাকে তাদেরকে প্রকৃতকোষ বলে। প্রকৃত কোষকে আবার কাজের ভিত্তিতে দুই ভাগে ভাগ করা যায়:

  • দেহকোষ: বহুকোষী জীবের দেহ যে কোষ দিয়ে গঠিত হয় তাকে দেহ কোষ বলে। মাইটোসিস পদ্ধতিতে এই কোষের বিভাজন ঘটে দেহের বৃদ্ধি ও ক্ষয় পূরণ হয়।
  • জননকোষ: যৌন প্রজননকারী জীবের প্রজননের সময় এই কোষ তৈরী হয়। এই কোষের মাধ্যমেই তাদের প্রজনন সম্পন্ন হয়। এই কোষে মিয়োসিস কেষ বিভাজন হয় ফলে কোষের ক্রোমোজোম সংখ্যা অর্ধেক হয়ে যায়।

কোষের বিভিন্ন অংশ

নিচের চিত্রে কোষের বিভিন্ন অংশের একটি ছক দেওয়া হল।

কোষের বিভিন্ন অংশ

কোষপ্রাচীর 🧱

সংজ্ঞা

যে জড় ও শক্ত পুরু প্রাচীর দিয়ে একটি কোষের চারিদিক আবৃত থাকে তাকে কোষপ্রাচীর বলে।

গঠন

১. গঠন ও পরিস্ফুটনের ভিত্তিতে উদ্ভিদের কোষপ্রাচীরে তিনটি ভিন্ন স্তর দেখা যায়, যথা-মধ্য পর্দা, প্রাথমিক প্রাচীর এবং গৌণ প্রাচীর।

২. কোষপ্রাচীরের যে স্তরটি দুটি পাশাপাশি কোষের মধ্যবর্তী সাধারণ পর্দা হিসেবে অবস্থান করে তার নাম মধ্যপর্দা বা মধ্য ল্যামেলা। কোষ বিভাজনের সাইটোকাইনেসিস ধাপে কোষপ্লেট থেকে এর উৎপত্তি ঘটে।

৩. প্রোটোপ্লাজম থেকে সেলুলোজ ক্ষরিত হয়ে মধ্য পর্দার উপর জমা হয়ে একস্তরবিশিষ্ট প্রাথমিক প্রাচীর গঠিত হয়।

৪. প্রাথমিক প্রাচীরর উপর স্তরে স্তরে সেলুলোজ জমা হয়ে যে স্থর সৃষ্টি করে তাকে গৌণ প্রাচীর বলে। গৌণ প্রাচীর তিন স্তর বিশিষ্ট হয়।

৫. পাশাপাশি অবস্থিত দুটি কোষের প্রাচীরের মাঝে কূপের মত সরু ছিদ্রের সৃষ্টি হয়। এই ছিদ্র দিয়ে প্রোটোপ্লাজমের সরু সুতার মত অংশ প্লাজমোডেসমার মাধ্যমে দুটি কোষ পরস্পরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে।

৬. রাসায়নিক দিক দিয়ে কোষপ্রাচীর সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ, লিগনিন, পেকটিন, সুবেরিন নামক রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তৈরী হয়ে থাকে।

কাজ

  • কোষকে নির্দিষ্ট আকৃতি দান করা।
  • বাইরের পরিবেশ থেকে সজীব প্রোটোপ্লাজমকে রক্ষা করা।
  • কোষের দৃঢ়তা দান করা।
  • কোষবিভাজনের ধারা বজায় রাখা।
  • বিভিন্ন কোষীয় বস্তুর যাতায়াতের পথ হিসেবে কাজ করা।
  • পাশাপাশি অবস্থিত দুটি কোষের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করা।

প্রোটোপ্লাজম 🧪

সংজ্ঞা

কোষপ্রাচীর দিয়ে ঘেরা কোষঝিল্লী, সাইটোপ্লাজম এবং নিউক্লিয়াসকে একত্রে প্রোটোপ্লাজম বলে।

সাইটোপ্লাজম

সংজ্ঞা

কোষ পর্দা থেকে শুরু করে নিউক্লিয়ার পর্দার আগে পর্যন্ত বিস্তৃত সজীব, অর্ধতরল, থকথকে, ঈষদচ্ছ জেলির মত পদার্থ কে সাইটোপ্লাজম বলে।

কোষঝিল্লী 🛡️

লিপোপ্রোটিন নির্মিত যে সজীব, অর্ধভেদ্য, স্থিতিস্থাপক ও দ্বিস্তরী পাতলা পর্দা দ্বারা জীবকোষ আবৃত থাকে তাকে কোষঝিল্লী বলে।

গঠন

১. কোষঝিল্লী একটি দ্বিস্তরী পাতলা পর্দা দিয়ে নির্মিত।

২. রাসায়নিক দিক থেকে এটি প্রোটিন ও লিপিড দিয়ে গঠিত লিপোপ্রোটিন দিয়ে গঠিত।

৩. এটি একটি বৈষম্যভেদ্য পর্দা। তাই এটি অভিস্রবণের মাধ্যমে পানি ও খনিজলবণ চলাচলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

৪. কোষঝিল্লীর গায়ে কিছু আঙুলের মত ভাঁজ দেখা যায় যাকে মাইক্রোভিলাই বলে।

কাজ

  • কোষঝিল্লী আবরণী হিসেবে কোষের ভিতরের সজীব অংশকে রক্ষা করে।
  • এটি কোষের আকৃতি প্রদান করে।
  • কোষের বহিঃ ও অন্তঃ মাধ্যমের মধ্যে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে।
  • কোষের মধ্যে বিভিন্ন বস্তুর যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করে।
  • মাইক্রোভিলাই পাশাপাশি অবস্থিত দুুটি কোষকে আটকে রাখতে সহায়তা করে।

সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণু 🧬

মাইটোকন্ড্রিয়া ⚡

কোষের সাইটোপ্লাজমে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো দ্বিস্তরী পর্দা বেষ্টিত, দন্ডাকার, গোলাকার, বৃত্ত বা তারকাকৃতির বদ্ধ থলির মত শক্তি উৎপাদনে ব্যবহৃত সজীব বস্তুগুলোকে মাইটোকন্ড্রিয়া বলা হয়।

গঠন

১. প্রতিটি মাইটোকন্ড্রিয়া দুটি ঝিল্লীতে আবদ্ধ থাকে।

২. বাইরের আবরণীটি মসৃণ।

৩. ভিতরের আবরণীটি ভিতরের দিকে ভাঁজ হয়ে থাকে। এই ভাঁজকে ক্রিস্টি বলে।

৪. ক্রিস্টির গায়ে অসংখ্য সবৃন্তক গোলাকার বস্তু থাকে যাকে অক্সিজোম বলে।

৫. শ্বসনের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন এনজাইম এই অক্সিজোমে সাজানো থাকে।

৬. মাইটোকন্ড্রিয়ার ভিতরের ঝিল্লী দিয়ে বেষ্টিত অন্তঃপ্রকোষ্ঠের তরল অংশকে ম্যাট্রিক্স বা মাতৃকা বলে।

৭. মাইটোকন্ড্রিয়ার ম্যাট্রিক্সে তার নিজস্ব DNA থাকে।

কাজ

  • শ্বসনের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম ও কোএনজাইম মাইটোকন্ড্রিয়া সরবরাহ করে।
  • গ্লাইকোলাইসিস ছাড়া শ্বসনের বাকি ধাপগুলো মাইটোকন্ড্রিয়ার অভ্যন্তরে ঘটে।
  • কোষের শক্তি উৎপাদনের মূল ধাপগুলো মাইটোকন্ড্রিয়ার অভ্যন্তরে ঘটে বলে একে পাওয়ার হাউস অব সেল বলে।

প্লাস্টিড 🌿

উদ্ভিদকোষের সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত ইতস্তত বিক্ষিপ্ত ডিম্বাকার, থালাকৃতির, ফিতাকৃতির অথবা তারকাকার সজীব বস্তুগুলোকে প্লাস্টিড বলে। প্লাস্টিড তিন ধরণের। যথা-১. ক্লোরোপ্লাস্ট, ২. ক্রোমোপ্লাস্ট এবং ৩. লিউকোপ্লাস্ট।

১. ক্লোরোপ্লাস্ট

সবুজ রঙের প্লাস্টিডকে ক্লোরোপ্লাস্ট বলে। ক্লোরোফিল নামক সবুজ বর্ণ কণিকা ধারণ করার জন্য এদের রঙ সবুজ হয়। পাতা, কচি কান্ড ও অন্যান্য সবুজ অংশে এদেরকে দেখতে পাওয়া যায়।

২. ক্রোমোপ্লাস্ট

সবুজ বাদে অন্য রঙের প্লাস্টিড গুলোকে ক্রোমোপ্লাস্ট বলে। এসব প্লাস্টিডে জ্যান্থোফিল নামক হলুদ বর্ণের, ক্যারোটিন নামক কমলা বর্ণের, ফাইকোএরিথ্রিন নামক লাল বর্ণের বা ফাইকোসায়ানিন নামক নীল বর্ণের বর্ণকণিকা উপস্থিত থাকে।

৩. লিউকোপ্লাস্ট

এই প্লাস্টডে কোনো বর্ণ কণিকা থাকেনা। সাধারণত উদ্ভিদের যেসকল অংশে সূর্যের আলো পৌছায়না (যেমন- মূল, ভ্রূণ, জননকোষ) সে সকল অংশের কোষে লিউকোপ্লাস্ট দেখতে পাওয়া যায়। সূর্যের আলোর উপস্থিতিতে লিউকোপ্লাস্ট ক্লোরোপ্লাস্টে রূপান্তরিত হতে পারে।

ক্লোরোপ্লাস্টের গঠন

১. প্রতিটি ক্লোরোপ্লাস্ট লিপোপ্রোটিন দিয়ে গঠিত একটি দ্বিস্তর বিশিষ্ট বৈষম্যভেদ্য ঝিল্লিতে আবৃত।

২. ঝিল্লিবেষ্টিত ক্লোরোপ্লাস্টের ভেতরে অবস্থিত স্বচ্ছ, দানাদার, অসবুজ, তরল জলীয় পদার্থটির নাম স্ট্রোমা। স্ট্রোমা গ্রানার ধাত্র বা ম্যাট্রিক্স হিসেবে কাজ করে।

৩. ক্লোরোপ্লাস্টের স্ট্রোমার ভিতরে ক্লোরোফিল বহনকারী ঝিল্লীযুক্ত অনেকগুলো গঠন থাকে। এদেরকে থাইলাকয়েড বা গ্রানাম চক্র বলে। অনেকগুলো গ্রানাম চক্র উপর্যুপরি সজ্জিত হয়ে একট গ্রানাম গঠন করে।

৪. পাশাপাশি অবস্থিত গ্রানার কিছু সংখ্য গ্রানাম চক্র অত্যন্ত সূক্ষ নালিকা দিয়ে যুক্ত থাকে। গ্রানাম চক্রের সংযোগ সাধনকারী এসব নালিকার নাম স্ট্রোমা ল্যামেলি।

কাজ

  • সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় শর্করা জাতীয় খাদ্য প্রস্তুত করে।
  • উদ্ভিদকে রঙিন করে তোলে।
  • ফুলকে রঙিন ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ফলে পরাগায়ন সহজ হয়।

গলজি বস্তু 🏭

সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত কতকগুলো ঘনসন্নিবিষ্ট চওড়া সিস্টারনি, থলির মতো বৃহৎ ভেসিকল এবং ক্ষুদ্র ভেসিকল এর সমন্বয়ে গঠিত জটিল অঙ্গাণুর নাম গলজি বস্তু। গলজি বস্তু প্রধানত প্রাণিকোষে দেখতে পাওয়া যায়।

গঠন

১. গলজি বস্তুতে ঝিল্লিময় তিনটি উপাদান থাকে, যথা-সিস্টারনি, ভ্যাকুওল ও ভেসিকল।

২. স্তুুপীকৃত, পর্দাবেষ্টিত, অসমান দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট ও সমান্তরালভাবে অবস্থিত লম্বা ও চাপা নালিকাসদৃশ বস্তুগুলো সিস্টারনি নামে পরিচিত। সম্ভবত মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক জালিকা থেকে সিস্টারনির উৎপত্তি হয়।

৩. সিস্টারনির কাছে অবস্থিত গোল থলির মতো অংশগুলো বৃহৎ ভেসিকল নামে পরিচিত। সিস্টারনির প্রাচীর চওড়া হয়ে বৃহৎ ভেসিকল সৃষ্টি করে।

৪. ক্ষুদ্র ভেসিকল হল সিস্টারনির নিচের দিকে অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্রথলির মতো অংশগুলো।

৫. রাসায়নিক দিক থেকে গলজিবস্তুর ঝিল্লি লিপোপ্রোটিন এ নির্মিত।

কাজ

  • কোষপ্রাচীর ও প্লাজমা মেমব্রেন গঠনে সহায়তা করে।
  • এর পর্দায় বিভিন্ন উৎসেচকের পানি বিয়োজন সম্পন্ন হয়।
  • হরমোন নিঃসরণে এর ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়।
  • বিপাকীয় কার্যের সাথে এর সম্পর্ক রয়েছে।
  • এরা কখনো কখনো প্রোটিন সঞ্চয় করে রাখে।

এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম 🌐

কোষের সাইটোপ্লাজমে বিস্তৃত ও ঝিল্লিবেষ্টিত জালিকাকার অঙ্গাণু যা একাধারে প্লাজমা মেমব্রেন ও নিউক্লিয়ার মেমব্রেনের মাঝে সংযোগ সৃষ্ট করে এবং সাইটোপ্লাজমকে অনিয়ত প্রকোষ্ঠে বিভক্ত করে অবস্থান করে তাকে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম বলে। রাইবোজোমের উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম দুরকম হয়ে থাকে। যথা- ১. অমসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম ও ২. মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম।

১. অমসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম

এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের গায়ে যদি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণার আকারে রাইবোজোম লাগানো থাকে তবে তাকে অমসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম বলে।

২. মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম

এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের গায়ে যদি কোনো রাইবোজোম কণা লাগানো না থাকে তবে তাকে মসৃণ এндোপ্লাজমিক রেটিকুলাম বলে।

কাজ

  • কোষ নিঃসৃত বিভিন্ন দ্রব্য এর মাধ্যমে কোষের একস্থান থেকে অন্যস্থানে পরিবাহিত হয়।
  • রাইবোজোমে উৎপন্ন প্রোটিন পরিবহনে এটি প্রধান ভূমিকা পালন করে।
  • এক কোষ থেকে অন্য কোষে বিভিন্ন বস্তুর যাতায়াতের পথ হিসেবে কাজ করে।
  • মাইটোকন্ড্রিয়া, কোষগহŸর সৃষ্টিতে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
  • রাইবোজোম লেগে থাকার দরুন এতে প্রোটিন সংশ্লেষণের ঘটনা ঘটে।

কোষগহ্বর 🕳️

কোষের সাইটোপ্লাজমের অভ্যন্তরে যে আপাত ফাঁকা স্থান দেখা যায় তাকে কোষ গহŸর বলে। বৃহৎ ও কেন্দ্রীয় কোষ গহŸর উদ্ভিদ কোষের বৈশিষ্ট্য। প্রাণি কোষে কোষ গহŸর সাধারণত অনুপস্থিত থাকে। তবে যদি কখনো উপস্থিত থাকে তবে তা আকারে ছোট এবং সংখ্যায় অসংখ্য হয়। কোষ গহŸর টনোপ্লাস্ট নামক পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে।

কাজ

  • প্রধান কাজ কোষ রস ধারণ করা।
  • বিভিন্ন ধরণের অজৈব লবণ, পারি, চর্বি জাতীয় পদার্থ, জৈব এসিড, রঞ্জক পদার্থ, পানি ইত্যাদি ধারণ করা।
  • অসমো রেগুলেশনে সাহায্য করা।
  • রেচন বস্তু ও খাদ্যবস্তু সঞ্চয় করা।

লাইসোজোম 🧴

কোষের সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত পদা দিয়ে বেষ্টিত, অতিক্ষুদ্র, গোলাকার, কোষীয় পরিপাকে অংশগ্রহণকারী অঙ্গাণুগুলোকে লাইসোজোম বলে।

গঠন

১. লাইসোজোম এক ধরনের ক্ষুদ্র, গোল থলি আকৃতির অঙ্গাণু।

২. এরা নির্দিষ্ট আকার-আকৃতি বিহীন।

৩. এর পরিপাক করার উৎসেচকগুলো একটা পর্দা দিয়ে আলাদা করা থাকে তাই অন্যান্য অঙ্গাণু এর সংস্পর্শে এলেও হজম হয়না।

৪. দেহে কোনো কারণে অক্সিজেনের অভাব হলে লাইসোজোমের পর্দা ক্ষতিগ্রস্থ হলে তখন এর আশেপাশের অঙ্গাণুগুলো নষ্ট হয়ে পুরো কোষটিই মারা যায়।

কাজ

  • কোষে প্রবিস্ট জীবাণুকে অটোফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় ভক্ষণ করা।
  • দেহের প্রতিরক্ষায় অংশগ্রহণ করে।
  • কোষ বা দেহ প্রতিকূল অবস্থায় পতিত হলে কোষ বা দেহকে ধ্বংস করে দেয়া।

কোষকঙ্কাল 🦴

মাইক্রোটিউবিউল, মাইক্রোফিলামেন্ট এবং ইন্টারমিডিয়েট ফিলামেন্ট দ্বারা গঠিত অসংখ্য দড়ির মতো গঠন যা সাইটোপ্লাজমে ছড়িয়ে থেকে ভিতর থেকে কেষকে ধরে রাখে তাকে কোষ কঙ্কাল বলে। রাসায়নিক ভাবে এটি অ্যাকটিন, মায়োসিন, টউবিউলিন ইত্যাদি প্রোটিন দিয়ে গঠিত হয়ে থাকে।

কাজ

  • এটি কোষের কঙ্কাল হিসেবে কাজ করে এবং কোষকে ধরে রাখে।
  • বিভিন্ন কোষীয় অঙ্গাণুর ধারক হিসেবে কাজ করে।

রাইবোজোম 🧬

সাইটোপ্লাজমে মুক্ত অবস্থায় বিরাজমান অথবা এন্ডোপ্লাজমিক জালিকার গায়ে অবস্থিত যে দানাদার কণায় প্রোটিন সংশ্লেষণ ঘটে থাকে রাইবোজোম বলে। প্রায় সকল ধরণের কোষেই রাইবোজোম উপস্থিত থাকে।

কাজ

  • এর প্রধাণ কাজ প্রোটিন সংশ্নেষণ করা।
  • প্রোটিনের পলিপেপটাইড চেইন সংযোজন রাইবোজোমে হয়ে থাকে।
  • রাইবোজোম প্রোটিন সংেেযাজনের জন্য প্রয়োজনীয় উৎসেচক সরবরাহ করে থাকে।

সেন্ট্রোজোম ⚙️

প্রাণিকোষে ও কিছু উদ্ভিদকোষে বিদ্যমান স্বপ্রজননক্ষম যে অঙ্গাণু নিউক্লিয়াসের কাছে অবস্থিত কিছু মাইক্রোটিউবিউল ও তার চারপাশে অবস্থিত গাঢ় সেন্ট্রোপ্লাজম নিয়ে গঠিত হয় তাকে সেন্ট্রোজোম বলে।

গঠন

১. সেন্ট্রোজোম দুটি অংশ নিয়ে গঠিত। যথা: ১. সেন্ট্রিওল ও ২. সেন্ট্রোপ্লাজম।

২. নিউক্লিয়াসের কাছে দুটি ফাঁপা নলাকার বা দÐাকার অঙ্গাণু নিয়ে সেন্ট্রিওল গঠিত।

৩. সেন্ট্রিওলের চারপাশে অবস্থিত গাঢ় তরলকে সেন্ট্রোপ্লাজম বলে।

কাজ

  • কোষবিভাজনের সময় স্পিন্ডল যন্ত্র তৈরীতে ভূমিকা রাখে।
  • সিলিয়া ও ফ্ল্যাজেলা যুক্ত কোষে সিলিয়া ও ফ্ল্যাজেলা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে।

নিউক্লিয়াস 🧬

প্রকৃত কোষের সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত সবচেয়ে গাঢ়, অস্বচ্ছ, ঝিল্লীবেষ্টিত গোলাকার অথবা উপবৃত্তাকার সজীব অংশটিকে কোষের নিউক্লিয়াস বা প্রাণকেন্দ্র বলে। নিউক্লিয়াস কোষের অপরিহার্য অংশ। উদ্ভিদের পরিণত সিভকোষ এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীর লোহিত রক্তকণিকা ছাড়া সমস্ত প্রকৃত কোষে নিউক্লিয়াস থাকে। একটি সুগঠিত নিউক্লিয়াসের চারটি অংশ থাকে। যথা: ১. নিউক্লিয়ার পর্দা বা ঝিল্লি ২. নিউক্লিওপ্লাজম ৩. নিউক্লিওলাস এবং ৪. ক্রোমাটিন জালিকা।

১. নিউক্লিয়ার পর্দা

যে সজীব দ্বিস্তরী পর্দা দিয়ে প্রতিটি নিউক্লিয়াস আবৃত থাকে তাকে নিউক্লিয়ার মেমব্রেন বা নিউক্লিয়ার ঝিল্লি বলে। এটি রাসায়নিক ভাবে প্রোটিন ও লিপিড নির্মিত লিপোপ্রোটিন দিয়ে গঠিত। নিউক্লিয়ার পর্দাটিতে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র থাকে যাকে নিউক্লিয়ার রন্ধ্র বলে।

কাজ

  • নিউক্লিয়াসকে রক্ষণাবেক্ষণ করে।
  • নিউক্লিওপ্লাজম, নিউক্লিওলাস ও ক্রোমোজোমকে সাইটোপ্লাজম থেকে আলাদা রাখে।
  • সাইটোপ্লাজমের সাথে নিউক্লিয়াসের বিভিন্ন বস্তুর যোগাযোগ রক্ষা করে।
  • এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের সাথে নিউক্লিয়াসকে যুক্ত করে।
  • নিউক্লিয়ার রন্ধ্রের মাধ্যমে বিভিন্ন বস্তুর আগমন ও নির্গমন নিয়ন্ত্রিত হয়।

২. নিউক্লিওপ্লাজম

নিউক্লিায়াসের অভ্যন্তরস্থ ও নিউক্লিায়ার মেমব্রেন দিয়ে আবৃত স্বচ্ছ, দানাদার ও জেলির মত অর্ধতরল পদার্থটির নাম নিউক্লিওপ্লাজম। এতে নিউক্লিক এসিড, প্রোটিন, উৎসেচক ও কতিপয় খনিজ লবণ থাকে।

কাজ

  • নিউক্লিওলাস ও ক্রোমোজোমের ধারক বা মাতৃকা হিসেবে কাজ করে।
  • নিউক্লিয়াসের জৈবনিক কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করে।

৩. নিউক্লিওলাস

নিউক্লিয়াসের মধ্যে অবস্থিত ক্ষুদ্র, গালাকৃতির, উজ্জ্বল ও অপেক্ষাকৃত ঘন বস্তুটিকে নিউক্লিওলাস বলে। সাধারণত একটি নির্দিষ্ট ক্রোমোজোমের নির্দিষ্ট স্থানে নিউক্লিওলাস সংয্ক্তু থাকে। নির্দিষ্ট ক্রোমোজোমের ঐ স্থানটির নাম স্যাটেলাইট। এটি RNA ও প্রোটিন দিয়ে তৈরী।

কাজ

  • এটি নিউক্লিক এসিডের ভান্ডার হিসেবে কাজ করে।
  • নিউক্লিওলাস রাইবোজোম প্রস্তুত করে।

৪. ক্রোমাটিন জালিকা

নিউক্লিওপ্লাজমে ভাসমান অবস্থায় বিদ্যমান প্যাঁচানো সূতার মত গঠনটিকে ক্রোমাটিন জালিকা বলে। কোষ বিভাজনের সময় এই ক্রোমাটিন জালিকা ভেঙে গিয়ে কতকগুলো নির্দিষ্ট সংখ্যক আঁকা-বাঁকা প্যাচানো সূতার মত ক্রোমোজোম গঠন করে। রাসায়নিক ভাবে প্রতিটি ক্রোমোজোম DNA, RNA, হিস্টোন ও ননহিস্টোন দিয়ে গঠিত।

কাজ

  • বংশগতির বৈশিষ্ট্যের ধারক ও বাহক হিসেবে কাজ করে।

বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

আইসোটোপ, আইসোটেন, আইসোবার ও আইসোমার কী? ব্যাখ্যা করো।

আইসোটোপ, আইসোটেন, আইসোবার ও আইসোমার কী তা নিম্নে ব্যাখ্যা করা হলো-


১. আইসোটোপ (Isotope)

যেসব পরমাণুর প্রোটন সংখ্যা একই, কিন্তু নিউট্রন সংখ্যা ভিন্ন, তাদের আইসোটোপ বলে।

🔹 উদাহরণ:

  • হাইড্রোজেনের তিনটি আইসোটোপ:
    ১. প্রোটিয়াম (
    1H
    \ce{^1H}
    ) → ১টি প্রোটন, ০টি নিউট্রন
    ২. ডিউটেরিয়াম (
    2H
    \ce{^2H}
    ) → ১টি প্রোটন, ১টি নিউট্রন
    ৩. ট্রিটিয়াম (
    3H
    \ce{^3H}
    ) → ১টি প্রোটন, ২টি নিউট্রন

🔹 ব্যবহার:
আইসোটোপ সাধারণত পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন, চিকিৎসা ও গবেষণায় ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণ: কার্বন-১৪ ফসিলের বয়স নির্ধারণে ব্যবহার করা হয়।


২. আইসোটোন (Isotone)

যেসব পরমাণুর নিউট্রন সংখ্যা একই, কিন্তু প্রোটন সংখ্যা ভিন্ন, তাদের আইসোটোন বলে।

🔹 উদাহরণ:

  1. কার্বন-১৪ (
    14C
    \ce{^{14}C}
    )
    → ৬টি প্রোটন, ৮টি নিউট্রন
  2. নাইট্রোজেন-১৫ (
    15N
    \ce{^{15}N}
    )
    → ৭টি প্রোটন, ৮টি নিউট্রন

এদের নিউট্রন সংখ্যা ৮, তাই তারা আইসোটোন


৩. আইসোবার (Isobar)

যেসব পরমাণুর ভর সংখ্যা (Mass Number) একই, কিন্তু প্রোটন ও নিউট্রন সংখ্যা ভিন্ন, তাদের আইসোবার বলে।

🔹 উদাহরণ:

  1. পটাসিয়াম-৪০ (
    40K
    \ce{^{40}K}
    )
    → ১৯টি প্রোটন, ২১টি নিউট্রন
  2. ক্যালসিয়াম-৪০ (
    40Ca
    \ce{^{40}Ca}
    )
    → ২০টি প্রোটন, ২০টি নিউট্রন

এদের ভর সংখ্যা ৪০ হলেও, প্রোটন ও নিউট্রন সংখ্যা আলাদা, তাই তারা আইসোবার


৪. আইসোমার (Isomer)

যেসব যৌগের আণবিক সংকেত (Molecular Formula) একই, কিন্তু গঠন বা বিন্যাস (Structure) ভিন্ন, তাদের আইসোমার বলে।

🔹 ধরন:

  1. গঠনগত (Structural) আইসোমার: পরমাণুগুলোর সংযোগ পদ্ধতি ভিন্ন।
    উদাহরণ: বিউটেন (C4H10\ce{C4H10})

    • n-বিউটেন (সোজা শৃঙ্খল)
    • আইসো-বিউটেন (একটি শাখা যুক্ত)
  2. স্থানগত (Stereoisomer) আইসোমার: পরমাণুর সংযোগ একই থাকে, কিন্তু তাদের স্থান বিন্যাস আলাদা হয়।
    উদাহরণ: গ্লৃকোজ ও গ্যালাক্টোজ


সারসংক্ষেপ:

পরিভাষা প্রোটন সংখ্যা নিউট্রন সংখ্যা ভর সংখ্যা সংযোজন বিন্যাস
আইসোটোপ (Isotope) ✅ একই ❌ ভিন্ন ❌ ভিন্ন ❌ ভিন্ন
আইসোটোন (Isotone) ❌ ভিন্ন ✅ একই ❌ ভিন্ন ❌ ভিন্ন
আইসোবার (Isobar) ❌ ভিন্ন ❌ ভিন্ন ✅ একই ❌ ভিন্ন
আইসোমার (Isomer) ✅ একই ✅ একই ✅ একই ❌ ভিন্ন

বুধবার, ৮ জানুয়ারী, ২০২৫

Biology" শব্দটির উৎপত্তি নিয়ে বিস্তারিত ধারণা

 "Biology" শব্দটির উৎপত্তি এবং এর ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:

১. "Biology" শব্দের মূল অর্থ ও উৎপত্তি

"Biology" শব্দটি এসেছে দুটি গ্রিক শব্দ থেকে:

  • "bios" (βίος), যার অর্থ "জীবন"
  • "logos" (λόγος), যার অর্থ "শিক্ষা", "বিদ্যা", "বিজ্ঞানের আলোচনা" বা "চর্চা"

এই শব্দ দুটির সমন্বয়ে "জীবন সম্পর্কে অধ্যয়ন" বোঝানোর জন্য "Biology" শব্দটি গঠিত হয়।


২. প্রথম "Biology" শব্দের ব্যবহার

"Biology" শব্দটি প্রথম কে ব্যবহার করেছিলেন তা নিয়ে কিছুটা মতভেদ রয়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ তিনজন বিজ্ঞানী শব্দটির ব্যবহার করেন:

(১) কার্ল ফ্রিডরিখ বুঢ়ডাখ (Karl Friedrich Burdach)

  • ১৮০০ সালে তিনি প্রথম "Biologie" শব্দটি ব্যবহার করেন।
  • বুঢ়ডাখ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন জীবনের প্রাকৃতিক দিক এবং শারীরিক কার্যকলাপ নিয়ে আলোচনা করার জন্য।

(২) জাঁ-ব্যাপ্টিস্ট লামার্ক (Jean-Baptiste Lamarck)

  • ১৮০২ সালে তিনি "Biologie" শব্দটি ব্যবহার করেন।
  • লামার্ক শব্দটির মাধ্যমে উদ্ভিদ ও প্রাণীর বৈজ্ঞানিক অধ্যয়নকে বুঝিয়েছিলেন।
  • তিনি বিশ্বাস করতেন, জীববিজ্ঞানের মাধ্যমে প্রাকৃতিক পরিবর্তন এবং বিবর্তনকে বোঝা যায়।

(৩) গটফ্রিড রাইনহোল্ড ট্রিভিরানুস (Gottfried Reinhold Treviranus)

  • তিনিও ১৮০২ সালে "Biologie" শব্দটি ব্যবহার করেন।
  • তার কাজ ছিল জীবজগতের সমগ্র অধ্যয়নকে অন্তর্ভুক্ত করা, যেখানে তিনি বলেছিলেন:
    "Biologie" হল জীবিত প্রাণী এবং তাদের জীবন-প্রক্রিয়ার বিজ্ঞান।

৩. Biology-এর জনপ্রিয়তা

যদিও বুঢ়ডাখ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন, লামার্ক এবং ট্রিভিরানুসের কাজের মাধ্যমে "Biology" শব্দটি দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। এর আগে জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখাকে আলাদা আলাদা নামে চিহ্নিত করা হতো, যেমন:

  • উদ্ভিদবিদ্যা (Botany)
  • প্রাণিবিদ্যা (Zoology)

"Biology" শব্দটি এই সকল শাখাকে একটি সমন্বিত নামের অধীনে নিয়ে আসে।


৪. Biology-এর আধুনিক সংজ্ঞা

বর্তমানে, জীববিজ্ঞান (Biology) বলতে বোঝানো হয়: "জীবন এবং জীবের গঠন, কার্যপ্রণালী, বৃদ্ধি, উৎপত্তি, বিবর্তন এবং বিতরণ সম্পর্কে বিজ্ঞান"।


"Biology" শব্দের ব্যবহার জীববিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এটি প্রাকৃতিক পৃথিবী সম্পর্কে মানব জাতির গভীর জ্ঞান এবং অনুসন্ধানের পথকে সুগম করেছে। আজকের দিনে এই শব্দটি বিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাখার নাম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

 

শুক্রবার, ১ নভেম্বর, ২০২৪

পেঁয়াজ কাটলে চোখ দিয়ে পানি বের হয় কেন?

 যদি আপনার কখনো জানতে ইচ্ছে করে- পেঁয়াজ কাটলে চোখ দিয়ে পানি বের হয় কেন? তবে এই লেখাটি আপনার জন্য।

ঠিক আছে, আসুন একটু বিস্তারিতভাবে দেখি। যখন আপনি পেঁয়াজ কাটেন, তখন এর কোষগুলো ভেঙে যায়। এই কোষগুলোতে দুটি প্রধান যৌগ থাকে:

1.      অ্যালিনেজ এনজাইম: এটি পেঁয়াজের কোষগুলোতে থাকে।

2.      অ্যামিনো অ্যাসিড সালফোক্সাইডস: এটি প্রাকৃতিক সালফার যৌগ যা পেঁয়াজে পাওয়া যায়।

যখন আপনি পেঁয়াজ কাটেন, তখন এই দুটি যৌগ একে অপরের সাথে মিশে যায় এবং এক ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়। এই বিক্রিয়া থেকে গ্যাস তৈরি হয়, যা প্রোপেনেথিয়াল এস-অক্সাইড (C3H6OS) নামে পরিচিত। এই গ্যাস বাতাসে ভাসতে থাকে এবং বাতাসে ভেসে যখন আপনার চোখে প্রবেশ করে তখন তা চোখের সংবেদনশীল স্নায়ুকে উদ্দীপিত করে। ফলে, আপনার চোখে একটি প্রতিরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়া ঘটে এবং অশ্রু গ্রন্থি থেকে পানি বের হয়, যা চোখকে সংবেদনশীল অবস্থায় রক্ষা করতে সাহায্য করে।

এই পুরো প্রক্রিয়াটি বেশ দ্রুত ঘটে, তাই আমরা পেঁয়াজ কাটতে শুরু করার পরই দ্রুত চোখে জল অনুভব করি। পেঁয়াজের এই প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া থেকে আমাদের চোখকে রক্ষা করতে আমরা কিছু পন্থা অবলম্বন করতে পারি, যেমন পেঁয়াজ কাটার সময় ঠান্ডা পানিতে ভেজানো বা পেঁয়াজ ফ্রিজে রেখে কাটা।

এবার বুঝতে পারলেন, পেঁয়াজ কাটার সময় কেন চোখে পানি চলে আসে? 😊

বুধবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৪

অবাত শ্বসনে CO2 গ্যাস নির্গমনের পরীক্ষা।

পরীক্ষণের নাম: অবাত শ্বসনে CO2 গ্যাস নির্গমনের পরীক্ষা।

 তত্ত্ব:

শ্বসন একটি জৈবনিক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় O-এর উপস্থিতিতে বা অনুপস্থিতিতে কোষের জৈব খাদ্য জারণের মাধ্যমে শক্তি নির্গত হয় এবং উপজাত দ্রব্য হিসেবে CO ও H2O উৎপন্ন হয়।

অবাত শ্বসন O এর অনুপস্থিতিতে ঘটে থাকে। এতে শ্বসনিক বস্তু অসম্পূর্ণরূপে জারিত হয়ে C2H5OH (ইথাইল অ্যালকোহল) ও CO উৎপন্ন হয় এবং অল্প পরিমাণ শক্তি নির্গত হয়।

 উপকরণ: একটি টেস্ট টিউব, একটি পেট্রিডিস, পারদ, ক্ল্যাম্পসহ স্ট্যান্ড, কয়েকটি অঙ্কুরিত ভেজা ছোলা, একটি বাঁকা চিমটা ও কষ্টিক পটাশ (KOH)-এর টুকরা।

 কার্যপদ্ধতি:

১. প্রথমে অঙ্কুরিত ছোলাবীজগুলোর খোসা ছাড়িয়ে রাখতে হবে।

২. এরপর ছোট বিকারটিতে কিছু পারদ ঢালতে হবে।

৩. টেস্ট টিউবটি পারদ দিয়ে সম্পূর্ণ ভর্তি করতে হবে।

৪. এবার টেস্ট টিউবের মুখ বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরে পেট্রিডিসে পারদের ওপর উপুড় করে স্ট্যান্ডের সাথে ক্লিপ দিয়ে আটকাতে হবে। টেস্ট টিউবটি এমনভাবে আটকাতে হবে যাতে এর মুখ পারদপূর্ণ পেট্রিডিসের তলা স্পর্শ না করে।

৫. এখন ছোলাবীজগুলো বাঁকা চিমটার সাহায্যে একটা একটা করে টেস্ট টিউবের মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে হবে। ছোলাবীজগুলো পারদের চেয়ে হালকা বলে টেস্ট টিউবের উপরের প্রান্তে উঠে যাবে। ছোলাবীজ ঢুকানোর সময় টেস্ট টিউবে যাতে বায়ু প্রবেশ না করে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। এই অবস্থায় পর্যবেক্ষণের জন্য একদিন রেখে দিতে হবে।



পর্যবেক্ষণ:

একদিন পর দেখা যাবে টেস্ট টিউবের পারদ স্তম্ভ কিছুটা নিচে নেমে এসেছে। এ অবস্থায় এক টুকরা কস্টিক পটাশ বাঁকা চিমটার সাহায্যে টেস্ট টিউবে প্রবেশ করালে দেখা যাবে টেস্ট টিউবের ফাঁকা স্বান পুনরায় পারদ দিয়ে পূর্ণ হয়ে গেছে।

 সিদ্ধান্ত:

১. প্রথমে সম্পূর্ণ পারদ দিয়ে পূর্ণ থাকা টেস্ট টিউবের মধ্যে অক্সিজেন ছিল না।

২. টেস্ট টিউবের মধ্যে বাতাস না থাকায় ছোলাবীজের অবাত শ্বসনে যে CO-গ্যাস নির্গত হয়েছে তার জন্যই পারদ স্তম্ভ নিচে নেমেছে।

৩. কষ্টিক পটাশ প্রবেশ করানোর ফলে ঐ CO গ্যাস শোষিত হওয়ায় পারদ স্তম্ভ আবার উপরে উঠেছে। আমরা জানি কস্টিক পটাশ CO-গ্যাস শোষণ করে।

 অতএব এই পরীক্ষা দিয়ে প্রমাণিত হলো যে- অবাত শ্বসনে CO-গ্যাস নির্গত হয়।

 সতর্কতা:

১. অঙ্কুরিত ছোলাবীজ নিতে হবে এবং ছোলাবীজের খোসা ছাড়িয়ে ফেলতে হবে।

২. টেস্ট টিউবটি সম্পূর্ণভাবে পারদ পূর্ণ করতে হবে যাতে টেস্ট টিউবে বাতাস না থাকে।

৩. টেস্ট টিউবের মুখ যেন পারদের মধ্যে থাকে এবং পেট্রিডিসের তলদেশ স্পর্শ না করে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

৪. ছোলাবীজ ঢুকানোর সময় টেস্ট টিউবে যাতে বায়ু প্রবেশ না করে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

জীবের বৃদ্ধি ও বংশগতি অধ্যায়ের ক্লাস লেকচার-পর্ব:০১

কোষ বিভাজন কোষ বিভাজন কোষ সংজ্ঞা: জীবদেহের গাঠনিক ও কার্যকরী একক যা অন্...